দাজ্জাল পর্ব-৩ (জীবন-মৃত্যুর পরীক্ষা)

আল্লাহ বলেন-যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য—কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (সুরা মুলক)

মুসলিমের ঈমান হল – জীবন ও মৃত্যুদানকারী মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন। অথচ দাজ্জাল প্রতারণা করবে – যাতে মানুষ তাকে জীবন-মৃত্যুর দানকারী রব ভাবে।

আসুন হাদীসগুলো দেখি-
রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ দাজ্জাল মানুষের কাছে গিয়ে বলবেঃ আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করে দেখাই তাহলে কি তুমি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে? সে বলবে অবশ্যই মানব। এ সুযোগে শয়তান তার পিতা-মাতার আকৃতি ধরে সন্তানকে বলবেঃ হে সন্তান! তুমি তার অনুসরণ কর। সে তোমার প্রতিপালক।(মুস্তারাকামে হাকিম)

তার মানে দাজ্জাল শয়তান জিনের সাহায্যে তা করবে। সে কখনও মৃতকে জীবিত করতে পারবে না, বরং শয়তান মানুষের বেশ ধরবে। আর শয়তানের মানুষ ও অন্যান্য প্রানীর ছদ্মবেশ ধারণ হাদীস দ্বারা প্রামানিত। দাজ্জাল, জ্বিন, কারিন পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দাজ্জাল বের হয়ে মদীনার দিকে অগ্রসর হবে। যেহেতু মদীনায় দাজ্জালের প্রবেশ নিষেধ তাই সে মদীনার নিকটবর্তী একটি স্থানে অবস্থান করবে। তার কাছে একজন মুমিন লোক গমণ করবেন। তিনি হবেন ঐ যামানার সর্বোত্তম মুমিন।
দাজ্জালকে দেখে তিনি বলবেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি সেই দাজ্জাল যার সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাবধান করেছেন।
তখন দাজ্জাল উপস্থিত মানুষকে লক্ষ্য করে বলবেঃ আমি যদি একে হত্যা করে জীবিত করতে পারি তাহলে কি তোমরা আমার ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করবে? লোকেরা বলবেঃ না।
অতঃপর সে উক্ত মুমিনকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। এ পর্যায়ে যুবকটি বলবেঃ আল্লাহর শপথ! তুমি যে মিথ্যুক দাজ্জাল- এ সম্পর্কে আমার বিশ্বাস আগের তুলনায় আরো মজবুত হলো।
দাজ্জাল তাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাঁকে হত্যা করতে সক্ষম হবেনা।

মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে উক্ত যুবক দাজ্জালকে দেখে বলবেঃ হে লোক সকল! এটি সেই দাজ্জাল যা থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাবধান করেছেন।
অতঃপর দাজ্জাল তার অনুসারীদেরকে বলবেঃ একে ধর এবং প্রহার কর। তাকে মেরে-পিটে যখম করা হবে। অতঃপর দাজ্জাল তাকে জিজ্ঞেস করবে এখনও কি আমার প্রতি ঈমান আনবেনা? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ উক্ত যুবক বলবেনঃ তুমি মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। তারপর দাজ্জালের আদেশে তার মাথায় করাত লাগিয়ে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে। দাজ্জাল দু’খন্ডের মাঝ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করবে।
অতঃপর বলবেঃ উঠে দাড়াও। তিনি উঠে দাড়াবেন। দাজ্জাল বলবে এখনও ঈমান আনবে না? তিনি বলবেনঃ তুমি মিথ্যুক দাজ্জাল হওয়ার ব্যাপারে এখন আমার বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অতঃপর তিনি বলবেনঃ হে লোক সকল! আমার পরে আর কারো সাথে এরূপ করতে পারবেনা। অতঃপর দাজ্জাল তাকে পাকড়াও করে আবার যবেহ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তার গলায় যবেহ করার স্থানটি তামায় পরিণত হয়ে যাবে। কাজেই সে যবেহ করতে ব্যর্থ হবে। অতঃপর তাঁর হাতে-পায়ে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। লোকেরা মনে করবে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অথচ সে জান্নাতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। নবী (সাঃ) বলেনঃ “এই ব্যক্তি হবে পৃথিবীতে সেদিন সবচেয়ে মহা সত্যের সাক্ষ্য দানকারী মুমিন।

যুগে যুগে আলেম, তাবেয়ী, সাহাবীরা ব্যাখা বুঝেছেন কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখা করার নাম দিয়ে আজগুবি ধারণা প্রচার হচ্ছে।

এখানে যুবককে জীবন-মৃত্যু আল্লাহ দিয়েছেন যাতে সকল মানুষের সামনে প্রমান হয় জীবন-মৃত্যুদানকারী শুধু আল্লাহ।
দাজ্জাল যদি জীবন-মৃত্যু দিতো পারতো, তাহলে প্রথমবার যেভাবে মৃত্যু দেওয়ার দাবি করেছিল ২য় বারও সম্ভব হতো।
কিন্তু প্রথমবার আল্লাহ চেয়েছিলেন তাই সম্ভব হয়েছে – ২য় বার তিনি চাননি তাই সম্ভব হয়নি। এই হতে প্রমান হয় দাজ্জাল কখনও জীবন-মৃত্যু দিতে পারবে না বরং সে শুধু ধোকা দিয়ে তা দাবি করবে।

দাজ্জাল তার অনুসারীদের সামনে নিজেকে রব প্রমান করার জন্য ষড়যন্ত্র করবে কিন্তু আল্লাহর মহানপরিকল্পনার নিকট তার ষড়যন্ত্র ধ্বংস হবে যেমনি রব দাবিদার ফেরাউন মানুষকে জড়ো করেছিল মুসা (আঃ) কে জাদুর মাধ্যমে হারিয়ে তার রব দাবি সত্যি প্রমান করতে। কিন্তু আল্লাহ তার জাদুকে নিঃশেষ করে দেন।

আর যেসব আলেম শুধু এটা প্রচার করে দাজ্জাল দেখলে শুধু পালাতে হবে তাহলে এই যুবক না পালিয়ে ভুল করেছে অথচ হাদীসে তাকে শ্রেষ্ঠ জীবনদানকারী বলা হয়েছে।

প্রকৃত তথ্য হল – ঈমানের অনুযায়ী মানুষের আমল হবে। কিছু মুসলিম যাদের ঈমান দৃঢ় হবে তারা দাজ্জালের সাথে জেহাদ করবে এবং জীবিতরা ঈসার (আঃ) সাথে যোগ দিবে। আর যাদের ঈমান এরচেয়ে একটু কম বা যারা তখন বিচ্ছিন্ন রইবে তাদের জন্য পালানো কল্যাণকর।

আর শহীদ যুবক সেই হাদীসের আমল করবে- জালেম শাসকের সামনে সত্য বলা উত্তম জেহাদ (আবুদাউদ) এজন্য যে শহীদ হবে সে উত্তম শহীদ। যেরূপ শহীদ জাকারিয়া (আঃ) , ইয়াহিয়া (আঃ) এর মতো নবীরা হয়েছিল। আর দাজ্জালের চেয়ে জালেম কে হবে, সে তার ক্ষমতা বলে বিশ্বকে পরিচালিত করতে চাইবে।
আজ যারা জালেম শাসকদের সমর্থন করবে ভয়ে বা সম্পদের লোভে, নিশ্চিত থাকুন দাজ্জালের ফেতনায় তারা পড়বেই।

দজ্জাল পর্ব-১

দাজ্জাল পর্ব-২

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *